Saturday, January 26, 2019

একজন কিংবদন্তি নেতার গল্প যার নাম নেলসন ম্যান্ডেলা। The story of a legendary leader whose is name nelson mandela

একজন কিংবদন্তি নেতার গল্প যার নাম নেলসন ম্যান্ডেলা। The story of a legendary leader whose is name nelson mandela....
জন্ম তার দক্ষিণ আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের একটি ছোট্ট এবং অখ্যাত গ্রামে। সময়টা ১৯১৮ সালের মাঝামাঝি। জন্মের পরে হয়তো কারো চোখে ধরা পরেছিল তার চোখে মুখে বিপ্লবের ঝড়। তাই তার নাম রাখা হয় ‘রনি লালা দালিভুংগা ম্যান্ডেলা’ বা নেলসন ম্যান্ডেলা। আফ্রিকান ভাষায় ‘রনি লালা’ শব্দের অর্থ ঝড়ঝঞ্ঝা। যে কিনা  হলেন পরবর্তীতে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন। যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহুবর্ণ ভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আজ তার ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৯৫ বছর।

নেলসন ম্যান্ডেলা জন্মগ্রহণ করেছিলেন ম্‌ভেজো গ্রামে থেম্বু রাজবংশে। থেম্বু জাতিগোষ্ঠীর রাজার পুত্র ম্যান্ডেলা ছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলার পিতামহ। ম্যান্ডেলা নাম নেলসন ম্যান্ডেলার বংশীয় নাম। যদিও নেলসন ম্যান্ডেলা এবং তার পিতা রাজ বংশের সন্তান ছিলেন কিন্তু তারা রাজা হওয়ার কোন সুযোগ পাননি কারণ নেলসনের পিতামহী ইক্সহিবা গোত্রের হওয়ায় রীতি অনুযায়ী তাঁর শাখার কেউ থেম্বু রাজবংশে আরোহণ করার অধিকার রাখেন না।


থেম্বু গোষ্ঠী
ম্যন্ডেলার বয়স যখন ৯ বছর, তখন তাঁর পিতা যক্ষা রোগে মারা যান। উপকূলের একজন বিখ্যাত সরদার ‘জন জিনটাবা ডালিন ডিয়েভা’ ম্যান্ডেলার লালন-পালনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। ম্যান্ডেলা রাজপ্রাসাদের কাছের একটি মিশনারী স্কুলে পড়াশোনা করেন। থেম্বু রীতি অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সে ম্যান্ডেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর গোত্রে বরণ করে নেয়া হয় এবং ম্যান্ডেলাকে তাঁর গোত্র থেকে নাম দেয়া হয় “মাদিবা”।



নেলসন ম্যান্ডেলার গোত্রবরণ
গোত্রভুক্ত হওয়ার পর তিনি ক্লার্কবারি বোর্ডিং ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করেন। সেখানে ম্যান্ডেলা ৩ বছরের জায়গায় মাত্র ২ বছরেই জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা পাস করেন। স্কুল পাস করে তিনি ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর অফ আর্টস কোর্সে ভর্তি হন।



ছাত্রজীবনে ম্যান্ডেলা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষের শেষে ম্যান্ডেলার জীবনে নতুন মোড় আসে। ম্যান্ডেলা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্র সংসদের ডাকা আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েন। এর ফলে তাঁকে ফোর্ট হেয়ার থেকে চলে যেতে বলা হয়। শর্ত দেয়া হয়, কেবল ছাত্র সংসদে নির্বাচিত সদস্য হতে পারলেই তিনি সেখানে ফেরত আসতে পারবেন। যার ফলশ্রুতিতে ফোর্ট হেয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেলসন ম্যান্ডেলাকে বহিস্কার করা হয়। এর পর নেলসন ম্যান্ডেলা একটি খনিতে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে চাকরী করেন কিন্তু সেখানেও বেশি দিন তার চাকরী স্থায়ী হয়নি। পরবর্তীকালে ম্যান্ডেলা জোহানেসবার্গের আইনী প্রতিষ্ঠান উইটকিন, সিডেলস্কি অ্যান্ড এডেলম্যানে কেরানি হিসাবে যোগ দেন। সেখানে ম্যান্ডেলার আইনি জীবনের শুরু, সেখানে চাকরী করার সুবাদে নানান মানুষের সাথে নেলসন ম্যান্ডেলার পরিচয় হয়। এর পরে ম্যান্ডেলা ইউনিভার্সিটি অফ উইটওয়াটার্সরান্ডে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা শুরু করেন। পড়াশোনা করার সময় অনেকের সাথেই তার পরিচয় হয়। যা পরবর্তীতে বন্ধুত্বে রূপ নেয়। এই সময়েই তিনি বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। সেসময় তার বন্ধুরাও তার সঙ্গী হয়। এদের মধ্যে টমবো আর ট্রান্সকেই এর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী কাইজার (কে ডি) মাটানজিমা ছিলেন অন্যতম।

আইনী প্রতিষ্ঠান উইটকিন, সিডেলস্কি অ্যান্ড এডেলম্যানে
ম্যান্ডেলা যখন ২৫ বছরে পা রাখলেন তখনই তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনা দৃঢ়ভাবে অঙ্কুরিত হয়ে উঠে। ১৯৪৩ সালে ম্যান্ডেলা রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বা এএনসি’তে যোগ দেন। ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে তিনি মহাত্মা গান্ধীর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী কর্মীরা আন্দোলনের প্রথম দিকে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিলো। ম্যান্ডেলাও প্রথম থেকেই অহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন।
কিন্তু ১৯৫৫ সালে নেলসন ম্যান্ডেলা শ্বেতাঙ্গদের সাথে সম্পত্তির সমান মালিকানার অধিকার ও শ্বেতাঙ্গদের সাথে কৃঞ্চাঙ্গদের সম-মানবধিকারের ঐতিহাসিক সনদটি ‘কংগ্রেস অব পিপলসে’ উত্থাপন করেন। ব্যাস! রাজনীতির স্বার্থবাদীদের টনক নড়ে উঠে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ই ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলা সহ ১৫০ জন বর্ণবাদ বিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তার করে। এই মামলাটি সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) চলে, কিন্তু মামলার শেষে সব আসামী নির্দোষ প্রমাণিত হন।



ম্যান্ডেলা সহ ১৫০ জন বর্ণবাদ বিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তার
১৯৬০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন শ্বেতাঙ্গ সরকার এএনসি’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। প্রকাশ্যে এএনসি রাজনীতি করার অধিকার হারিয়ে ফেলে। শুরু হয় এএনসি’র গোপন রাজনৈতিক তৎপরতা। এএনসি গোপনে শক্তিশালী হতে থাকে। ১৯৬১ সালে ম্যান্ডেলা এএনসি’র সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন মখোন্তো উই সিযওয়ে (অর্থাৎ “দেশের বল্লম”, সংক্ষিপ্ত নাম MK) এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এই সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

মখোন্তো উই সিযওয়ে
তিনি বর্ণবাদী সরকার ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলা পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এসময় এক বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন,
“সরকার যখন নিরস্ত্র এবং প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পাশবিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন সরকারের সঙ্গে শান্তি এবং আলোচনার কথা বলা নিস্ফল”।
এতে বর্ণবাদী সরকার পিছু না হটলে প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে যাবার জন্যও ম্যান্ডেলা পরিকল্পনা করেন। ম্যান্ডেলা নিজে তাঁর এই সশস্ত্র আন্দোলনকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিতান্তই শেষ চেষ্টা বলে অভিহিত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন সফল হবে না বলে তিনি উপলব্ধি করেন এবং এ জন্যই সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নেন।ধীরে ধীরে বিপ্লবী ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষের মনে জায়গা করে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন ঝড়ো-বিপ্লবের গতিতে।

মখোন্তো উই সিযওয়ে
১৯৬২ সালের ৫ই আগস্ট ম্যান্ডেলাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জোহানেসবার্গের দুর্গে আটক রাখা হয়। ১৯৬৪ সালের ১২ই জুন দেয়া রায়ে ফাঁসীর বদলে নেলসন ম্যান্ডেলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তাকে পাঠিয়ে দেয়া হলো দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক নির্জন রোবেন দ্বীপে। দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহাসিক সেই রোবেন দ্বীপেই এক প্রকার শৃঙ্খলিত অবস্থায় পৃথিবীর সবচেয়ে অমানবিক নির্যাতনের ভিতর দিয়ে কেটে যায় ম্যান্ডেলার জীবনের ১৮টি বছর। এরই মাঝে তার মমতাময়ী মা এবং স্নেহধন্য পুত্রের মৃত্যু হয়। মা এবং পুত্রের লাশটি পর্যন্তু দেখার সুযোগ দেয়া হয়নি তাকে।

রোবেন দ্বীপের কারাগার
১৯৬৯ সালে আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার একটি পরিকল্পনা করে যাতে তারা কারাগারে নেলসন ম্যান্ডেলাকে জেল থেকে মুক্ত করার একটি মিথ্যা অভিযান চালাবে এবং সেই অভিজাতে নেলসন ম্যান্ডেলাকে ক্রস ফায়ার করে হত্যা করা হবে কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের খবর ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা জেনে ফেলায় তা নস্যাৎ হয়ে যায়। যখন নিভৃত রোবেন দ্বীপে ম্যান্ডেলা ধীরে ধীরে নিঃশেষিত হচ্ছিলেন ঠিক তখনই তার এক জীবন ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা রোবেন দ্বীপে অন্তরীণ ম্যান্ডেলা’র পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচারণার আয়োজন করেন। প্রতিনিয়ত বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে লাগলেন।

কারাগারে ম্যান্ডেলা
১৯৮২ সালের মার্চ মাসে ম্যান্ডেলাকে রবেন দ্বীপের কারাগার থেকে পোলস্‌মুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এসময় ম্যান্ডেলার সাথে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের উচ্চপদস্থ নেতা ওয়াল্টার সিসুলু, অ্যান্ড্রু ম্লাগেনি, আহমেদ কাথরাদা এবং রেমন্ড ম্‌লাবাকেও সেখানে নেয়া হয়। ধারণা করা হয়, ম্যান্ডেলাকে স্থানান্তর করার মূল লক্ষ্য ছিলো ম্যান্ডেলার সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের গোপন বৈঠক ও আলোচনার ব্যবস্থা করা। ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানিন্তন রাষ্ট্রপতি পি ডব্লিউ বোথা ম্যান্ডেলাকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার প্রস্তাব দেন। শর্তটি ছিলো, ম্যান্ডেলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করতে হবে। কোয়েটসি সহ অন্যান্য মন্ত্রীরা অবশ্য বোথার এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। তারা মত প্রকাশ করেন যে, ম্যান্ডেলা ব্যক্তিগত কারামুক্তির লোভে পড়ে কখনোই নিজের সংগঠনকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ থেকে সরিয়ে আনবেন না। ম্যান্ডেলা আসলেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন।
ওদিকে বন্ধুদের আয়োজন চলতেই থাকে। শেষ পর্যন্ত তা আর বিফলে গেল না। ১৯৯০ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী, দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর আন্তর্জাতিক চাপের মুখে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ১৯৯০ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি তারিখে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানিন্তন রাষ্ট্রপতি এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্ক আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস সহ অন্যান্য বর্ণবাদ বিরোধী সংগঠনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। পাশাপাশি ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দেয়া হলো।

২৭ বছর পর কারামুক্তি
এতবছর পর মুক্তি পেয়ে ম্যান্ডেলার কি করা উচিত ছিল? প্রতিশোধ নেওয়া? তিনি চাইলেই কিন্তু পারতেন পাল্টা মামলা করতে। অন্যের জন্য লড়াইয়ে জেল খেটেছেন। চাইলেই পারতেন চুপচাপ নিজের বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে। কিন্তু না তিনি তা করলেন না। কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য আন্দোলন চালিয়ে গেলেন। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেওয়া হয় ম্যান্ডেলাকে।

শান্তিতে নোবেল পেলেন ‘মাদিবা’
মুক্তির পর দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের সঙ্গে নতুন এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনা শুরু হয়, যেখানে সব বর্ণ এবং সব জাতির সমানাধিকার থাকবে। এর পথ ধরেই ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নেলসন ম্যান্ডেলা। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনে ৪০০ আসনের মধ্যে ২৫২টি আসন পেয়ে তার দল এএনসি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এরপর নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের পদ অলংকৃত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে নির্বিশেষে সববর্ণের মানুষের গণতান্ত্রিক ভোটে দেশটিতে প্রথমবারের মতো কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সফলভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৯৯ সালে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহন করেন।

নির্বাচনে জয়ের পর ম্যান্ডেলা
২০০৮ এর জুলাই পর্যন্ত ম্যান্ডেলা ও এএনসি কর্মীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা থেকে নিষিদ্ধ ছিলো। কেবল মাত্র নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে তাদের আসার অনুমতি ছিলো। এর কারণ ছিলো ম্যান্ডেলার ষাটের দশকের সশস্ত্র আন্দোলনের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার ম্যান্ডেলা ও এএনসিকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করেছিলো। ২০০৮ এর জুলাইতে এসেই কেবল ম্যান্ডেলাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারে প্রণীত সন্ত্রাসবাদীদের তালিকা হতে সরিয়ে নেয়া হয়।
২০১৩ সালের ৮ জুন তিনি ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরবর্তী ছয় সপ্তাহ তিনি হাসপাতালেই কাটান। ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর ম্যান্ডেলাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর নিজের বাড়িতে শান্তিপূর্ণভাবেই চিরনিদ্রায় চলে যান এই কিংবদন্তী নেতা।
নেলসন ম্যান্ডেলা শুধু আর দক্ষিণ আফ্রিকার নেতা নন। ৯৫ বছরের নেলসন ম্যান্ডেলা এখন বিশ্বের এক অবিসংবাদিত নেতার নাম। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট স্কয়ারে বিশ্বের মুক্তি আন্দোলনের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার এক বিশাল ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। দেখতেই পাচ্ছেন তাহলে বাস্তবের নায়ক ম্যান্ডেলা বছরের পর বছর কারাবন্ধী থেকেও তার আন্দোলন থেকে পিছ পা হন নি। এই কারাবাস তার মধ্যে যেন নতুন উদ্দোমের জন্ম দিয়েছিল। আজ তার মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি দক্ষিণ আফ্রিকার ‘মাদিবা’ খ্যাত নেলসন ম্যান্ডেলাকে।

3 comments: